• ২০২৫ Jun ১৫, রবিবার, ১৪৩২ আষাঢ় ১
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৮:০৬ অপরাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের সম্পত্তি এখন যে অবস্থায়

  • প্রকাশিত ০৮:০৬ অপরাহ্ন রবিবার, Jun ১৫, ২০২৫
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের সম্পত্তি এখন যে অবস্থায়
সংগৃহীত
ক্রাইম রিপোর্টার ঃএস এম রাহুল

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের সম্পত্তি এখন যে অবস্থায়

বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি


বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ১২ আসামির মধ্যে ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে এক আসামি জিম্বাবুয়েতে ২০০১ সালের ২ জুন মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া আরও পাঁচ আসামি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। পালিয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারা হলেন– মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) বজলুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ, মেজর (অব.) একে মহিউদ্দিন, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশিদ খান। এছাড়া ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর হয় বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া লেফটেন্যান্ট আব্দুল মাজেদের। অন্যদিকে পলাতক অবস্থায় ২০০১ সালে ২ জুন জিম্বাবুয়েতে মারা যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল আজিজ পাশা।


আসামিদের মধ্যে পাঁচজন এখনও বিভিন্ন দেশে পলাতক হিসেবে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে জারি রয়েছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ। তারা হলেন– সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএইচএমবি নুর চৌধুরী (যিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছে), অব্যাহতি পাওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী (যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছে), অব্যাহতি পাওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম (সম্ভাব্য অবস্থান চীন, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, লিবিয়া), বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ (সম্ভাব্য অবস্থান লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, লেবানন, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ইতালি), এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন (সম্ভাব্য অবস্থান ভারত)।

কার সম্পত্তি কোথায়


বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আসামিদের মধ্যে ছয় জনের বাংলাদেশের কোথায় কোথায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ সদর দফতর। সেই প্রতিবেদনের কপি এসেছে বাংলা ট্রিবিউনের হাতে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের পর্যায়ে রয়েছে। আর অনেক সম্পত্তি ইতোমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন


বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন


দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। নরসিংদীর দত্তেরগাঁও গ্রামের বাড়িতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ি ও জমিসহ ৪৫ দশমিক ৪৫ একর সম্পত্তি ছিল তার নিজের নামে। সেই সম্পত্তির মধ্যে ২৮ শতাংশ এরইমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি শিবপুর মডেল থানার সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ আছে। তবে এই সম্পত্তি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

পৈতৃক সম্পত্তি তার চার ভাই আতিউর রহমান খান ওরফে আক্তার রহমান খান মৃত, মফিজ উদ্দিন খান মৃত, আশরাফ উদ্দিন খান ও মোসলেহ উদ্দিন খান ও বোন নুরুন্নাহার ওরফে নুরু বেগম মৃত তফসিল অনুসারে বণ্টন করা হয়েছে।


এছাড়া খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নরসিংদির দাওয়াতির দাসপাড়ার বর্তমান ঠিকানার মোট ১২ শতাংশ জমির মালিক তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। তার সন্তানরা হলো- সাজিদুল ইসলাম, শাহনাজ খান, শফিকুল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, মাজেদুল ইসলাম ও মহিদুল ইসলাম। তাদের প্রত্যেকের দুই শতাংশ করে জমি কেনা। সেই জমিতে বর্তমানে চার রুমবিশিষ্ট একতলা বিল্ডিং আছে। যার বর্তমান মূল্য আনুমানিক ৮০ লাখ টাকা। মোসলেহ উদ্দিনের অস্থাবর সম্পত্তি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ক্রোক করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৯ অক্টোবর মাসের নরসিংদী মডেল থানার জিডি নম্বর-১০৮৮ এর ভিত্তিতে থানার হেফাজতে রয়েছে এই সম্পত্তি।

ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ

খুনি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ


আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের বেশকিছু সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। এরমধ্যে আবার কিছু সম্পত্তি নিয়ে তার স্ত্রী তার নিজের দাবি করে ভোলায় সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। মামলটি এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকার ৪১ নম্বর জেএল কুতুবা মৌজায় শূন্য দশমিক ৬৭৫ একর, ১৭ নম্বর জেএল কুড়ালিয়া মৌজায় ২ দশমিক শূন্য ৯৭ একর এবং ১৮ জে এল বাটামারা মৌজায় ১ দশমিক শূন্য ৭০ একর, সব মিলিয়ে মোট ৩ দশমিক ৮৪ একর জমি ছিল। যা ভোলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাছে ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত অবস্থায় আছে। ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই জমি।


পরবর্তীতে ৪১ নম্বর জে এল কুতুবা মৌজার শূন্য দশমিক ৭৫ একর সম্পত্তি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের স্ত্রী ডাক্তার সালেহা বেগম তার নিজ নামে দাবি করে বাদী হয়ে ভোলায় সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

খন্দকার আবদুর রশিদ


লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ


বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক আসামি বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে– কুমিল্লার চান্দিনা থানার পানিখোড়ায় মোট ২ দশমিক ৮৪ একর, চয়ঘড়িয়ায় ১২ দশমিক ৪৩, করতলায় শূন্য দশমিক ১৮ একর, থানগাঁওয়ে ১ দশমিক ৩৮ একর। ক্রোককৃত সম্পত্তির পরিমাণ ১৬ দশমিক ৮৩ একর। ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮২ একর সম্পত্তি। যা বর্তমানে কুমিল্লার চান্দিনা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী


বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী


বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরীর (সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া) নামে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার সোনাইমুড়িতে নিজ ও মায়ের ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া সর্বমোট ১১৫ একর জমি ছিল। সেই জমি চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের আদেশে বাজেয়াপ্ত করে খাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিবিধ মোকদ্দমার আদেশে সেই জমি যথাযথভাবে রেকর্ড সংশোধন করে ৮নং রেজিস্টার ও খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

শরিফুল হক ডালিম


খুনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম


অব্যাহতি পাওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিমের নামে গুলশানে ৩৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর প্লটের বাড়িটির বিপরীতে সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় ঋণ থাকায় সোনালী ব্যাংক আদালতে মামলা করে। পরে বাড়িটির নিলাম হলে তাসুকা প্রোপারটিজ কিনে নেয়। ব্যাংক ঋণ সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৮ দশমিক ৭০ টাকা সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় ডিপোজিট হিসেবে জমা আছে। সেই টাকা ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।


এছাড়া মোহাম্মদপুর থানার পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির প্লট নম্বর ৬০, ব্লক-ক ঠিকানায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিমের বাড়ি ছিল। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আদালতের নির্দেশে সেখানে উচ্ছেদ কার্যক্রমে সহায়তা করে। বাড়িটি বর্তমানে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের দখলে রয়েছে।

 বঙ্গবন্ধু খুনিদের আরও যেসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, সহায়-সম্বল রয়েছে সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন। বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রণালয় এবং সে দেশগুলোর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ চলমান রয়েছে। যারা পলাতক রয়েছে তাদের মধ্যে সবার বিরুদ্ধেই রেড নোটিশ জারি রয়েছে।


উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় ২০ জনকে আসামি করে ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর মামলা করেন মহিতুল ইসলাম। বিচার শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন সেশন জজ কোর্ট ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে অব্যাহতি দেন। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হলে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিন জনকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।

সর্বশেষ