• ২০২৫ Jun ১৬, সোমবার, ১৪৩২ আষাঢ় ২
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

কারাগার থেকে শীর্ষ জঙ্গিরা সরকারি কর্মকর্তা-আঃলীগ নেতাদের বাসায় ডাকাতির নির্দেশ দিতো

  • প্রকাশিত ১২:০৬ অপরাহ্ন সোমবার, Jun ১৬, ২০২৫
কারাগার থেকে শীর্ষ জঙ্গিরা সরকারি কর্মকর্তা-আঃলীগ নেতাদের বাসায় ডাকাতির নির্দেশ দিতো
ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 কারাগার থেকে শীর্ষ জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বাসায় ডাকাতি নির্দেশ দিতো। সেই অনুযায়ী জঙ্গিদের একটি গ্রুপ পেশাদার ডাকাতদের সঙ্গে মিলে ডাকাতি করতো। আর সেই অর্থ জঙ্গি দাওয়াতি কাজে ও কারাগারে শীর্ষ জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো।

সোমবার রাতে তেজগাঁও থানার তেজতুরী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসিফুর রহমান আসিফ (২৬) ও পিয়াস শেখ (২৮) নামে দুই জঙ্গি গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ এমন তথ্য দিয়েছে ডিবি পুলিশের কাছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, কয়েকটি মোবাইল ও ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারেও অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিয়মিত মামলা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গি ডিবি পুলিশকে জানায়, তারা পুরাতন জেএমবির সক্রিয় সদস্য। কাশিমপুর কারাগারে বন্দি তাদের শীর্ষ নেতা আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ, আবু সাঈদ, আল-আমিন ও ফয়সালের নির্দেশে তারা সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতি করে বেড়াতো। পুলিশের অভিযানের সময় তাদের সঙ্গে আনোয়ার আলী ওরফে হৃদয়, তানজিল বাবু, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালেহ, পাভেল ওরফে রাহুল, জোসেফ, রোজীসহ বেশ কয়েকজন বৈঠকের জন্য মিলিত হয়েছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতারকৃত আসিফের মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন এ্যাপ ঘেঁটে কিছু তথ্য পেয়েছেন। জেলখানা থেকে কারাবন্দি শীর্ষ জঙ্গি নেতারা তাদের এসব বার্তা পাঠিয়েছিল। এরমধ্যে একটি বার্তায় সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাসায় ডাকাতি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে।

বিশেষ করে গ্রেফতারের পর আসিফের কাছ থেকে যে ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে, তা ২০ ও ১৫ হাজার করে দুই ভাগে ভাগ করে প্যাকেটে রাখা ছিল। প্যাকেটের ওপর তাসনিম নাহিদ ও আল-আমিন, কাশিমপুর লেখা ছিল। ডাকাতি করা এসব টাকা কারাবন্দি দুই জঙ্গি নেতার কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ জানিয়েছে, এর আগেও তারা ডাকাতি করা অর্থ কারাগারে তাদের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে।

এডিসি শাহাদাত হোসেন সুমা জানান, গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁও বিভাগের হাতিরঝিল, শেরেবাংলা নগর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ছয়টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ডাকাতি করা কিছু স্বর্ণ, টাকা উদ্ধারসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় ও চারজন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এসব ডাকাতির ঘটনায় পেশাদার ডাকাত দলের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন।

সে সময় পেশাদার কয়েকজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর হৃদয়, তানজিল বাবু, সকালসহ কয়েক জনের নাম পান তারা। তবে ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে ছিল।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজমের একজন কর্মকর্তা জানান, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে যারা ডাকাতির নির্দেশনা দিয়েছে তারা শীর্ষ জঙ্গি নেতা। এরমধ্যে আবু সাঈদ ২০০৫ সালে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। সে ২০০৭ সালে ভারতে পালিয়ে গিয়ে নদীয়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার জেএমবি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কলকাতা পুলিশের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তাকে ধরতে ১০ লাখ রূপি পুরষ্কার ঘোষণা করে।

২০১৫ সালে আবু সাঈদ দেশে ফিরে এলে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তিনি জানান, কারাবন্দি আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদও পুরাতন জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। ২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে তাসনিম। ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তাসনিম গ্রেফতার হয়।

আবু সাঈদ ও তাসনিম ছাড়াও বাকি দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতার একজন আল-আমিন আনসার আল ইসলামের নেতা ও ফয়সাল হরকাতুল জিহাদ নেতা। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রায় একই। জেলখানায় বসে এই তিন জঙ্গি সংগঠনের নেতারা যৌথভাবে এক হয়ে ডাকাতি করে তহবিল সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেন। কয়েক জঙ্গি গ্রেফতারের পর সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়

সর্বশেষ